logo

Online: 0

Village Natural Beauty

A-H-P

A-H-P

2 followers

time4 months agoview1 views

গ্রামের এক কোণে বয়ে চলেছে একটি ছোট নদী। এটি বড় নয়, কিন্তু এর পাশে দাঁড়ালে মনে হয় যেন এক বিশাল শান্তির জগতে চলে এসেছি। নদীর পানি স্বচ্ছ ও ঠান্ডা, আর সেই পানিতে সূর্যের আলো পড়ে চকচক করে ওঠে। পানির ওপর মাঝে মাঝে শালুক আর পদ্ম ফুল ভেসে থাকে। ছোট ছোট ঢেউ তুলে নদীটি আপন ছন্দে এগিয়ে চলে, যেন কোনো গন্তব্যে যাচ্ছে না—তবু চলছে।

নদীর দুই পাশে সবুজ ধানক্ষেত। বর্ষাকালে এই ধানক্ষেত আরো সুন্দর হয়ে ওঠে। দূর থেকে মনে হয় সবুজের একটি গালিচা বিছানো হয়েছে। সেই গালিচার মাঝে মাঝে দেখা যায় কাক, বক আর সাদা বকপাখি ধীরে ধীরে হেঁটে বেড়াচ্ছে। কখনো কখনো ছোট ছেলে-মেয়েরা নদীর পাড়ে খেলে। কেউ নৌকা চালায়, কেউ মাছ ধরে, আবার কেউ নদীর পানিতে গোসল করে আনন্দে হইচই করে।

নদীর পাড় ঘেঁষে রয়েছে কিছু তালগাছ, নারকেল গাছ ও কাশবন। তালগাছের মাথায় বাতাসে দুলতে থাকা পাতাগুলো যেন গান গায়। আবার কাশবনের সাদা ফুলগুলো যখন বাতাসে দুলে উঠে, তখন মনে হয় এ এক সাদা ঢেউ, নদীর পানির ঢেউয়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলেছে। নদীর ধারে দুপুরবেলায় দাঁড়ালে শোনা যায় ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক, পাখির কিচিরমিচির আর পাতার হালকা মর্মর শব্দ।

প্রতিদিন সকালে যখন সূর্য ওঠে, তখন নদীর উপর রঙিন আলো পড়ে। সেই আলোতে নদীর পানি সোনালী রঙের মতো দেখায়। আর সন্ধ্যায় যখন সূর্য অস্ত যায়, তখন আকাশের লাল আভা নদীর পানিতে প্রতিফলিত হয়ে এক অপূর্ব দৃশ্য তৈরি করে। অনেক সময় কিছু পাখি—বিশেষ করে বক, মাছরাঙা বা দোয়েল পাখি—নদীর ধারে এসে বসে থাকে বা মাছ শিকার করে। মাছরাঙা যখন নদীর ওপরে উড়ে এসে হঠাৎ পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে, তখন চোখের পলকে একটি মাছ ধরে ফেলে। এটি দেখতে যেমন মজার, তেমনি প্রাকৃতিক জীবনের এক অপূর্ব দৃশ্য।

নদীর আশেপাশে মাঝে মাঝে ছোট ছোট নৌকা দেখা যায়। গ্রামের মানুষ এই নৌকাতে করেই এক পাড় থেকে অন্য পাড়ে যায়। অনেক সময় মাছ ধরার জাল ফেলে রাখে নদীতে। আর সকালবেলা সেই জাল তুলে দেখা যায় কত রকমের ছোট-বড় মাছ ধরা পড়েছে। ছোট ছেলেরা নদীর ধারে বসে কেঁচো দিয়ে ছিপ ফেলে মাছ ধরে, তাদের চোখে-মুখে আনন্দ আর উত্তেজনা স্পষ্ট বোঝা যায়।

বর্ষাকালে নদীর রূপ কিছুটা বদলে যায়। তখন পানি বেড়ে গিয়ে পাড় ছাপিয়ে পড়ে ফসলের খেতে। কিন্তু সেই দৃশ্যও একরকম সুন্দর। পানি আর সবুজ ফসল একসাথে মিলেমিশে এক অপূর্ব দৃশ্য তৈরি করে। বর্ষার দিনগুলোতে নদীর ধারে দাঁড়িয়ে থেকে বৃষ্টি দেখা, টিনের ছাউনিতে বৃষ্টির টাপুর টুপুর শব্দ শোনা—এসবই এক অন্যরকম অনুভূতি এনে দেয়।

শীতকালে নদীর পানি কমে যায়, পাড়ে পাড়ে বালি জমে। তখন শিশুরা সেই বালির উপর খেলাধুলা করে। অনেক সময় দেখা যায়, গ্রামের বড়রা সেখানে বসে গল্প করছে, কেউ কেউ লাঠি খেলা করছে, আবার কেউবা নদীর পাশেই হাঁসের পাল চড়াচ্ছে। হাঁসেরা দলবেঁধে পানিতে নেমে ডুব দিয়ে খাবার খোঁজে, মাঝে মাঝে তাদের ডাকে নদীর চারপাশ কানে কানে মিষ্টি আওয়াজ তুলে।

বসন্তকালে নদীর ধারে নতুন ঘাস গজায়, নতুন ফুল ফোটে। পাখিরা বাসা বাঁধে গাছে গাছে। চারদিকেই তখন নতুন প্রাণের স্পর্শ। গ্রামের মেয়েরা নদীর পাড়ে ফুল তোলে, আবার অনেকে নদীতে কাপড় কাচে। ছোট বাচ্চারা নদীর পাড়ে বসে জলাশয়ে পা ভিজিয়ে রাখে, আর কেউ কেউ কাঁকড়া, ঝিনুক বা ছোট মাছ খুঁজে বেড়ায়।

সব মিলিয়ে এই ছোট নদীটি শুধু একটি পানির ধারা নয়, এটি যেন গ্রামের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি শুধু চাষাবাদ, মাছ ধরা বা যাতায়াতের জন্য নয়, এটি মানুষের মনের প্রশান্তি, জীবনের আনন্দ আর প্রকৃতির সৌন্দর্যের প্রতীক।

এই নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা মানে প্রকৃতির সাথে এক গভীর সংযোগ তৈরি হওয়া। একাকী মুহূর্তে এই নদীর ধারে দাঁড়িয়ে থেকে জীবনের ক্লান্তি ভুলে যাওয়া যায়। এখানকার হাওয়া, পানি, আলো, গাছপালা আর প্রাণীর সাথে মিলেমিশে মনে হয়—এই পৃথিবী সত্যিই সুন্দর।

এই ছোট নদীর পাশে দেখা সেই সাধারণ অথচ মধুর প্রাকৃতিক দৃশ্যগুলো আমাদের মনে প্রশান্তি আনে, ভালোবাসা জাগায় এবং শেখায় প্রকৃতির কাছাকাছি থেকে বাঁচতে।

Loading comments...
affpapa
sigma-africa
sigma-asia
sigma-europe

Licensed